করাচি, ৭ই ডিসেম্বর (রয়টার)-একজন-এক ভোট-এর ভিত্তিতে আজ পাকিস্থানে প্রথম সাধারণ নির্বাচন বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে নির্বিগ্নে শেষ হয়।
পাকিস্থানের নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান রচনার জন্য যে গণ-পরিষদ গঠিত হবে তার ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯০টি আসনের জন্য আজ নির্বাচন হয়। পূর্ব পাকিস্থানের সাম্প্রতিক দূর্যোগের জন্য ১০টি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত থাকে। ২৯০টি আসনে প্রার্থী ছিলেন ১৭৫০ জন।
আজ মধ্যরাত্রি পর্যন্ত নির্বাচনের যেটুকু ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে তাতে পূর্ব পাকিস্থানে আওয়ামি লীগ প্রার্থীদের কিছুটা অগ্রগামী থাকতে দেখা যায়।
বেসরকারী খবরে প্রকাশ, পূর্ব পাকিস্থানের তিনটি আসনে শেষ মুজিবরের আওয়ামি লীগ প্রার্থীরা কিছু ভোটে এগিয়ে আছেন। সে আসনগুলি হল :
ঢাকা-এ কে শামসুল হক (আওয়ামি লীগ)-২১৭, সালাম (পাকিস্থান ডিমক্রাটিক পার্টি)-১৩।
রংপুর-নুরুল হক (আ: লীগ)-৪৯২, আবদুল রহিম (জামাত ই-ইসলাম)-১৪৫।
বগুরা-ডাঃ জেড রহমান (আ: লীগ)-৪০০, মহম্মদ আমেদ (জা: ইসলামি)-২৫০।
ঢাকা শহরে ভোট পড়ে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ, রাজশাহী ও পাবনায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। রেডিও পাকিস্থান থেকে এ সংবাদ প্রচারিত হয়েছে।
পূর্ব পাকিস্থানের জন্য নির্দিষ্ট ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে আজ ভোট নেওয়া হয়। পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, পূর্ব পাকিস্থানের নির্বাচনে শেষ মুজিবরের দলের প্রার্থীরা বিপুল ভোটাধিক্যে জয়লাভ করবেন।
আজ অপরাহ্ণে নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা পাকিস্থানের ৩১,০০০ ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে ভোট গণনা শুরু হয়ে যায়।
রেডিও পাকিস্থান-এর খবর, সাতটি উপজাতীয় কেন্দ্রের ভোটের সম্পূর্ণ ফল জানা গেছে এবং তার মধ্যে অন্তত তিনটিতে নির্দলীয় প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।
গণপরিষদের গঠন
পাকিস্থানের নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান রচনার দায়িত্ব যে গণপরিষদের উপর নাস্ত হবে তার সদস্য হবেন ৩১৩ জন। তার মধ্যে ১৩ জন মহিলা সদস্য পরে, নির্বাচিত ৩০০ জন সদস্যের দ্বারা নির্বাচিত হবেন। নির্বাচিত ৩০০ সদস্যের মধ্যে পূর্ব পাকিস্থানের সদস্য থাকবেন ১৬২ জন, পশ্চিম পাকিস্থানের ১৪৮। পূর্ব পাকিস্থানের সাস্প্রতিক দূর্যোগের জন্য ১০টি আসনের নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে।
জেনারেল ইয়াহিয়া নতুন গণপরিষদকে সংবিধান রচনার জন্য ১২০ দিন সময় দেবেন। তার মধ্যে সংবিধান রচনার কাজ শেষ না হলে গণপরিষদ বাতিল হয়ে যাবে ও আবার নির্বাচন হবে।
জেনারেল ইয়াহিয়া আরও বলেছেন, নতুন সংবিধানে যদি পাকিস্থানের দুই শাখার বর্তমান বন্ধন আরও শিথিল করার প্রস্তাব করা হয়, তবে তিনি তা মানবেন না।
অপর দিকে শেখ মুজিবর যে নির্বাচনী কর্মসূচী জনগণের সম্মুখে পেশ করে ভোটপ্রার্থী হয়েছেন, তাতে শুধু প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় কেন্দ্রের হাতে রেখে অন্যসব বিষয়ের শাসন দায়িত্ব প্রদেশগুলির উপর অর্পন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সব দল-নেতাই এগিয়ে আছেন
নির্বাচনের সর্বশেষ ফলাফলের গতি-প্রকৃতি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, পাকিস্থানের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির সব ক’জন নেতাই ভাল ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন। আওয়ামি লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান তিনটি কেন্দ্রেই তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের অনেক পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন। পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ও পাকিস্থানের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেড এ ভূট্টোও পশ্চিম পাকিস্থানের ৬টি নির্বাচন কেন্দ্রে জয়ের পথে অনেক খানি এগিয়ে গেছেন। পাকিস্থান মুসলিম লীগের নেতা খান আবদুল কোয়ায়ুম খান, ন্যাশনাল আওয়ামি পার্টির নেতা খান ওয়ালি খান, পাকিস্থান ডিমোক্রাটিক পার্টির নেতা নুরুল আমিন সকলেই তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের অনেক পেছনে ফেলে গিয়েছেন।
কাউন্সিলর মুসলিম লীগের নেতা মিয়া মুমতাম দৌলতানা তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পিপলস পার্টির প্রার্থী জনাব তাজ মহম¥দের চেয়ে ১৩০০ ভোটে এগিয়ে আছেন। দৌলতানা পেয়েছেন ১২,১৩৩ ভোট।
ন্যাশনাল আওয়ামি পার্টির নেতা খান ওয়ালি খান তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জমিয়ৎ-উল-উলেমা-ই-পাকিস্থান প্রার্থীর চেয়ে ৫,৬২০ ভোটে এগিয়ে আছেন।
প্রাদেশিক বিধানসভাগুলির নির্বাচন হবে ১৭ই ডিসেম্বর।
আজ সকাল থেকে পাকিস্থানের সাধারণ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে।
গত ২৩ বছরের মধ্যে এই সব - প্রথম প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে এই রাষ্ট্রে সাধারণ নির্বাচন হচ্ছে।
পাক বেতারের খবরে প্রকাশ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সময় আইন-শৃঙ্খলার ব্যবস্থা অক্ষুণœ রাখার জন্য সেনাবাহিনী যথোপযুক্ত সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
কেউ নিনর্বাচনী কেন্দ্রে কোন রকম গ-গোল পাকাবার চেষ্টা করলে কঠোর দন্ড দেওয়া হবে।
এ পির খবরে প্রকাশ, করাচীতে মেয়েদের জন্য যে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র খোলা হয় তার সামনে দুটি দল মারামারি আরম্ভ করলে পুলিশ বেটন চার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে।
এদিকে রেডিও পাকিস্থান ভোট গ্রহণের যা ধারাবিবরণী প্রচার করে তাতে বলা হয়, খুবই শান্তিপূর্ণভাবে ও সুশৃঙ্খলভাবে পাকিস্তানে ভোট গ্রহণের কাজ এগিয়ে চলছে।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আজ রাওয়ালপিন্ডিতে ভোটদান করেন। পরে দিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে ভোট গ্রহণ সংক্রান্ত তাঁর অঙ্গীকার তিনি রক্ষা করেছেন। নির্বাচনের পরেই সামরিক শাসকদের হাত থেকে বেসরকারী নেতৃবর্গের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হবে।
তিনি বলেন, নুতন জাতীয় বিধানসভা সংবিধান প্রণয়ন করবেন এবং সে বিষয়ে চূড়ান্ত মত দেবেন প্রেসিডেন্ট নিজে।