ঢাকা, ৯ই ডিসেম্বর (ইউ এন আই)- আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান আজ এখানে বলেন যে, পাকিস্থানের নতুন জাতীয় সভা যে সংবিধান রচনা করবে তা অবশ্যই তাঁর দলের নির্বাচনী ফতোয়ার ভিত্তিতে হতে হবে, যাতে শুধু প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় কেন্দ্রের হাতে রেখে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্ত শাসন কায়েমের কথো বলা হয়েছে।
সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে বিপুল সাফল্য লাভের পর শ্রীরহমান আজই প্রথম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, সোমবারের নির্বাচনকে তিনি তাঁর দলের ছয়-দফা কর্মসূচীর সমর্থনে গণভোট বলে মনে করেন।
তিনি বলেন, পাক জাতীয় সভায় আওয়ামি লীগ একাই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে, সংবিধান রচনাকালে এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
তিনি পশ্চিম পাকিস্থানের জনগনের কাছে অতীতের সব বিবাদ বিসম্বাদ ভুলে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য ‘বাঙ্গালী ভাইয়েদের’পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানান।
শ্রী রহমান বলেন, পূর্ব পাকিস্থানের জনগণের কাছে তাঁর একমাত্র বাণী-যাতে একদিন প্রকৃত স্বাধীন পরিবেশে বাস করতে পারি, তার জন্য আজ সব বাধা লঙ্ঘনের সঙ্কল্প নিতে হবে।
একজন বিদেশী সাংবাদিক যখন তাকে জিজ্ঞাসা করেন, পশ্চিম পাকিস্থানের কোন দলের সঙ্গে জোট বাঁধার কথা তিনি চিন্তা করছেন কিনা- শ্রী রহমান তার উত্তরে সরাসরি বলেন, তাঁর দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে কিছু বলার আগে শ্রী রহমান পূর্ব পাকিস্থানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবীতে যাঁরা মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তিনি জানান যে, ১৭ই ডিসেম্বর প্রাদেশিক বিধানসভার নির্বাচন শেষ হওয়ার পর দিনি তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মসূচী ঘোষণা করবেন।
মুজিবরের সঙ্গে কথা বলতে চাই-ভূট্টো
পশ্চিম পাকিস্থানের নির্বাচনে সর্বাধিক আসনে জয়ী পিপলস পার্টিল নেতা শ্রী জেড এ ভুট্টো আজ বলেন যে, দুই দলের মধ্যে সহযোগিতার জন্য তিনি আওয়ামি লীগ নেতা মুজিবর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে রাজি আছেন।
কিন্তু আওয়ামি লীগ মহল থেকে বলা হয় যে, দুই দলের মধ্যে সমঝোতার সম্ভাবনা খুবই কম।
ঐ মহলের খবর, শ্রী রহমান বিভিন্ন দলের জোট বাধাঁয় বা আঁতাতে বিশেষ আস্থাশীল নন। ১৯৫৮ সালের স্বল্পস্থায়ী কোয়ালিশন সরকারের তিক্ত অভিজ্ঞতাই তাঁকে কোয়ালিশনে আস্থাহীন করেছে। তবে পশ্চিম পাকিস্থানের যে সব দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কর্মসূচীর মিল আছে তাঁদের সঙ্গে হাত মেলাতে শ্রীরহমান অরাজী হবেন না। সাংবাদিকদের কাছে শ্রীরহমান একটি লিখিত বিবৃতি প্রচার করেন। তাতে বলা হয়েছে, দেশে নতুন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন অবশ্য প্রয়োজন। তিনি এমন এক রাজনৈতিক ব্যবস্থা কায়েমের পক্ষপাতী যাতে দেশের এক অংশের সঙ্গে অপর অংশের, এক ব্যক্তির সঙ্গে অপর ব্যক্তির কোন বৈষম্য থাকবে না।
মুজিবর রহমান সাংবাদিক বৈঠকে
পশ্চিম পাকিস্থানের উদ্দেশ্যে শ্রীরহমান বলেন, পূর্ব পাকিস্থানের জনগণ জমিদার ও পুজিপতিদের শোষণ ও শাসন থেকে নিজেদের মুক্ত করবেই। এ কাজে তারা পশ্চিম পাকিস্থানের সহায়তা চায়।
তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্থানের সমস্যা হয় বুভূক্ষা দারিদ্র্য, বেকার সমস্যা ও বারবার বন্যা। এসবের সমাধানের উপর আজ সবচেয়ে বেশী জোর দিতে হবে। এই প্রদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজ দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত হয়ে আছে। ও ব্যাপারে আর দেরী করা চলবে না।
নির্বাচনে সর্বশেষ দলগত অবস্থা
আওয়ামী লীগ - ১৫১
পিপলস পার্টি - ৮১
মুসলিম লীগ (কায়ুম) -৯
মুসলিম লীগ (কাউন্সিল) -৭
মারকাজি জমায়েৎ-উল-উলেমা-ই-পাকিস্থান - ৭
জমায়েৎ-উল-উলেমা-ই-ইলাম - ৭
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ওয়ালি গ্রুপ) - ৫
জামাত ইসলামী - ৪
জামা ইসলামী - ৪
মুসলিম লীগ (কনভেনশন) - ২
পাকিস্থান ডিমঃ পার্টি -১
নির্দলীয় - ১৬
মোট - ২৯০
বালুচিস্থানের একটি আসনের ফল ঘোষণা বাকী আছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য পূর্ব পাকিস্থানে ৯টি আসনে নির্বাচন স্থগিত আছে। সব নির্বাচন শেষ হলে পাক জাতীয় সভার ৩০০ সদস্য এবং ১৩ জন মহিলা সদস্য নির্বাচিত করবেন। তাদের মধ্যে ৭ জন হবেন পূর্ব পাকিস্থানের।
বাঙ্গালীর জয় : মুজিবর
সাংবাদিক বৈঠক শেখ মুজিবর সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনের ফলাফল বর্ণনাকালে বলেন, এটা বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ নিপীড়িত মানুষের জয়। কিন্তু লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত এ লড়াই বন্ধ হবে না।
ভুট্টোর আশা
শ্রীজেড এ ভুট্টো নির্বাচনের ফলাফলকে জনমতের জয় বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি আশা করেন, ইয়াহিয়া খাঁর শর্ত মতো ১২০ দিনের মধ্যেই নতুন সংবিধান রচনার কাজ শেষ হবে।
গণতন্ত্রের জয় - জগজীবন রাম
নয়াদিল্লী, ৯ই ডিসেম্বর (ইউ, এন, আই)- শাসক কংগ্রেসের সভাপতি শ্রীজগজীবন রাম আজ আশা প্রকাশ করেন যে, এই নির্বাচনের ফলে ভারত ও পাকিস্থানের সম্পর্কের উন্নতি হবে।
তিনি বলেন, শেখ মুজিবরের নেতৃর্ত্বে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভে গণতন্ত্রের জয় সুপ্রতিষ্ঠিত হল।
শ্রীরাম আরও বলেন, মত প্রকাশের প্রথম সুযোগ পেয়েই পাকিস্থানের জনগণ প্রগতি ও সমাজবাদের পক্ষে মত দিলেন।
...৭টি আসন শূন্য হবে
নয়াদিল্লী, ৯ই ডিসেম্বর (ইউ এন আই) - পাকিস্থানের নির্বাচনী ফলাফল গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে পাকিস্থান জাতীয় পরিষদের অন্তত ৭টি আসন শূন্য হবে।
নির্বাচন কমিশনের আইন অনুসারে একজন ব্যক্তি মাত্র একটি আসনেই নির্বাচিত হতে পারেন। এ অবস্থায় পাঁচটি কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জেড এ ভুট্টোকে ৪টি আসন এবং ৩টি কেন্দ্রে থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবর রহমানকে ২টি আসন ছাড়তে হবে। পিপলস পার্টির মুখপত্র ‘মুসাওয়াত’-এর প্রাক্তন সম্পাদক কৌসার নিয়াজিকেও হয়ত তার আসন খোয়াতে হবে, কারণ, সামরিক আইনের বিধি অনুসারে তাকে ৫ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। নির্বাচনী আইনে এমন বিধান আছে যে, কোনও ব্যক্তি সামরিক আইনের বিধান ৫ বা ততোধিক বছরের মেয়াদে দন্ডিত হলে তিনি নির্বাচনের পক্ষে অনুপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন।