1970-12-11
Page: 2
(লন্ডন অফিস থেকে)
১০ই ডিসেম্বর-পূর্ব পাকিস্থান যাতে পশ্চিম পাকিস্থান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, সেজন্য পূর্ব পাকিস্থানাস্থ বৃটিশ সাংবাদিকরা উৎসাহ দিচ্ছে বলে পাকিস্থানের সংবাদপত্রগুলি অভিযোগ করলেও পূর্ব পাকিস্থানের বৃটিশ সাংবাদিকরা শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাধিক্যে জয়লাভ করবে বলে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তা সত্য হয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্থানে ভূট্টোর পিপল্স্ পার্টির অনুরূপ জয়ে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। ভুট্টোর পিপলস পার্টির এই বিপুল সংখ্যাধিক্যে জয় কিছুটা আশাতীত। গার্ডিয়ান পত্রিকার করাচীস্ত সংবাদদাতা লিখেছেন যে ভুট্টো দলের এই আশাতীত জয়লাভে বর্তমান প্রশাসন বিমূঢ় হয়েছেন। বর্তমান প্রশাসন আদর্শের দিক থেকে ভূট্টোকে ভন্ড বলে মনে করেন।
একাধিক দিক থেকে সাম্প্রতিক নির্বাচন পাকিস্থানের রাজনীতিকে সুস্পষ্ট এবং অপেক্ষাকৃত সহজ করেছে। এই নির্বাচন মুসলিম লীগ এবং অন্যান্য পুরোনো রাজনৈতিক দলকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করেছে। পাকিস্থানের রাজনৈতিক কার্যকলাপ দীর্ঘদিন স্থগিত থাকার পর ব্যাঙ্গের ছাতার মত যেসব ছোট ছোট রাজনৈতিক দল গুজিয়ে উঠেছিল এই নির্বাচনে সেগুলিরও বিলুপ্তি ঘটেছে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্থান এখন দুজন নেতার অধীনে সংহত হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক আদর্শ এবং কৌশলের দিক থেকেই এই দুই নেতার মধ্যে পার্থক্য আছে তা নয়। ব্যাক্তিত্বের দিক থেকেই এই দুই নেতার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ভূট্টোর রাজনৈতিক কৌশল হচ্ছে ভারত-বিরোধিতা এবং চীনের সমর্থন তথ্য মার্কিণ বিরোধিতা। ভুট্টো মনে করেন ভারতের ওপর চীন ও পাকিস্থানের সম্মিলিত আক্রমণেই কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হতে পারে। আজ টাইমস্ পত্রিকার প্রধান সম্পাদকীয় প্রবন্ধে বলা হয়েছে যে, পিপলস পার্টির আচরন ও কার্যকলাপ সপ্তদশক অপেক্ষা পঞ্চদশকের উযোগী কেননা এই দলের নেতা একজন জমিদার এবং অকস্ফোর্ড ও ক্যালিফোর্ণিয়ার একজন স্মাতক ও লিঙ্কনস্ ইন এর একজন স্মাতক। ভুট্টোর পিপলস পার্টির আচরণ ও কার্যকলাপ বাঙ্গালী জাতীয়তা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এই বাঙ্গালী জাতীয়তাই শেখ মুজিবর রহমানের আওয়ামী লীগকে উদ্বুদ্ধ করেছে। আসল কথা হচ্ছে যে, বহু বৎসর ধরে পশ্চিম পাকিস্থানে এবং পূর্ব পাকিস্থারে দলগুলি ঐলামিক সমাজতন্ত্রের স্ব-স্ব দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে পৃথক পৃথক ভাবে গড়ে উঠেছে। ঐলামিক আদর্শের এই দৃষ্টিভঙ্গী আবার স্থানীয় অবস্থার দ্বারা প্রভাবিত।
গার্ডিয়ানের প্রতিনিধি পাকিস্থানের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে লিখেছেন যে এরপর পাকিস্থানের সংবিধান নিয়ে দুই দলের নেতার মধ্যে বাগবিতন্ডার সম্ভাবনা রয়েছে। একটি দল পশ্চিম পাকিস্থানের প্রতি পূর্ব পাকিস্থানের ক্রোধ ও ঘৃণার জোরে জয়লাভ করেছে, অপর দলের জয়লাভের মূলে রয়েছে পশ্চিমী দেশগুলির নিন্দাবাদ। কেউ কেউ মনে করছেন যে মুজিবর যদি তাঁর ছ-দফা কর্মসূচী কার্যকর করার চেষ্টা করেন তাহলে ভুট্টো আওয়ামী লীগের ওপর টেক্কা মেরে পশ্চিম পাকিস্থানকে বিচ্ছিন্ন করার দিকে নিয়ে যাবেন। অথবা ভূট্টো এবং মুজিবর হয়তো নিজেদের স্বাথের ক্ষেত্র নির্দিষ্ট করে নিয়ে কিছুদিন সহ-অবস্থান করতে পারেন।